‘দ্যা আর্ট অব দ্যা ওয়ার’-এর কারণে চৈনিক সমরবিদ মহামতি সানজুকে আমরা এখন অনেকেই চিনি। দুনিয়ার তাবৎ সামরিক আকাদেমিতে এই বই পাঠ্যবই হিসেবে পড়ানো হয়। আর পড়ানোও উচিত। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে রচিত এই বইয়ের কলাকৌশলগুলো আজকের দিনেও অত্যন্ত উপযোগী। কিন্তু আমরা কি কখনোও ভেবে দেখেছি, প্রায় একই সময়ে (খ্রিস্টপূর্ব ৩৭০-২৮৩ অব্দ) আমাদের এই ভারতবর্ষেও এমন একজন মানুষ ছিলেন যার সমরকৌশল, পররাষ্ট্রনীতি ও অর্থনীতিতে অসামান্য পান্ডিত্য ছিল। তিনি হলেন আচার্য চাণক্য।

প্রাচীন তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও রাষ্ট্রনীতির অধ্যাপক চাণক্য ছিলেন মৌর্য্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের রাজ-উপদেষ্টা। তার রচিত চাণক্য নীতি বইয়ে তিনি পররাষ্ট্রনীতি ও সামরিক কৌশল সম্পর্কে বিশদ আলোশনা করেছেন। আর ‘শাম দাম দন্ড ভেদ’ এই বইয়ে বর্ণিত একটি সূত্র। যদি কখনো কোন লোককে দিয়ে কোন কাজ করানোর প্রয়োজন হয় তখন এই সূত্র অনুসরণ করা হয়।

শাম Link to heading

প্ররোচিত করুন, তোষামোদ করুন, অনুপ্রাণিত করুন। এটা হল এই সূত্রের একেবারে প্রথম ধাপ। যাকে দিয়ে কাজ করাতে চান, তাকে কাজটি বুঝিয়ে বলুন, কাজের উপকারিতা বুঝিয়ে বলুন। তাকে তোষামোদ করে রাজি করান। অনুপ্রাণিত করে কাজটি করতে প্ররোচিত করুন।

দাম Link to heading

এটা এই সূত্রের দ্বিতীয় ধাপ। যদি প্ররোচিত করেও রাজি করাতে না পারেন, তবে তার লালসাকে জাগিয়ে তুলুন, তাকে অর্থ প্রদান করুন। অর্থ সবকিছু কিনতে পারে না, কিন্তু অর্থ সত্যিই অনেক অলৌকিক কাজ করতে পারে। আর ‘দাম’ মানে শুধুই অর্থ নয়, বরং বিনিময়। বলা হয়, দুনিয়াতে সবকিছুরই বিনিময় থাকে। সেই বিনিময়কে খুঁজে বের করে তাকে প্রদান করতে হবে কাজটি করার জন্য।

দন্ড Link to heading

বাংলায় প্রবাদ আছে,“সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকাতে হয়।” ‘দন্ড’ যেন এরই সংক্ষিপ্ত সংস্করণ। এই পর্যায়ে লোকটিকে মারধোর-জেল-জরিমানার হুমকি দেখানো হয়। যদি সে ভালয় ভালয় কাজটি করে না দেয়, তবে তাকে শাস্তি দেয়া হবে - এই ভয় দেখানোই এই সূত্রের তৃতীয় ধাপ।

ভেদ Link to heading

চতুর্থ এবং শেষ ধাপ। যদি কোন কিছুতেই কোন কিছু না হয়, তখন ‘ভেদ’ নীতি প্রয়োগ করা হয়। বলা হয়, সব মানুষেরই কোন কোন দুর্বলতা থাকে, দুর্বল জায়গা থাকে। এই নীতি অনুযায়ী সেই দুর্বল জায়গায় প্রহারের ভয় দেখানো হয়। এটা অনেকটা ব্লাকমেইলিংয়ের মত। ‘যদি তুমি আমার কাজ না করে দেও, তবে আমি তোমার এই গোপন জিনিস জনসম্মুখে প্রচার করে দেব’ - টাইপের কাজকারবার।

আপাতদৃষ্টিতে এই সূত্রকে অত্যন্ত ভয়ংকর বলে মনে হয়। কিন্তু আচার্য চাণক্যের এই নীতি বহু ভাল কাজেও অত্যন্ত উপযোগী। তবে এ নিয়ে অনেক মতবিরোধ আছে।