মেসেঞ্জার নিয়ে হঠাৎ কিছু গাণিতিক হিসাব-নিকাশ মাথায় আসল আজকে। ধরা যাক, X একজন মানুষ, দৈনিক গড়ে ৫০ জন মানুষের থেকে মেসেজ পান তিনি। আরো ধরা যাক, মেসেজের উত্তর দিতে জনপ্রতি গড়ে ৫ মিনিট করে সময় ব্যয় করেন তিনি। তাহলে দৈনিক কি পরিমাণ সময় তিনি মেসেঞ্জারে ব্যয় করেন?

খুবই সাধারণ মানের ঐকিক নিয়মের একটা অঙ্ক (গণিত)। হিসেব কষলে উত্তর আসে ৫০*৫ = ২৫০ মিনিট। আরেকটু সুন্দর করে লেখা যায়, ৪ ঘন্টা ১০ মিনিট। এইখানে একটা তথ্য দিয়ে রাখতে চাই, এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে প্রায় ৪০% জাপানিজ গড়ে ছয় ঘন্টার কম ঘুমায়, বাকি সময় তারা কাজ করে। তথ্যটা এমনিই দিলাম, নো অফেন্স প্লিজ।

এখন প্রশ্ন হল, দৈনিক ৫০ জনের থেকে মেসেজ পাওয়া কতটুকু সম্ভব? এখানেও একটু হিসাব-নিকাশ করা যায়। ফ্রেন্ডলিস্টে ৫০০০ জন মানুষ থাকলে ৫০ জনের মেসেজ পাওয়া অসম্ভব কিছু না। অবশ্য ৫০০০ জনের সবাইকে একটিভ হতে হবে। আর যাদের প্রচুর ফলোয়ার আছে তাদের কথা না হয় নাই বললাম। হাসিন ভাই, সুবীন ভাই, জাকির ভাইদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ৫০ জনের মেসেজ পাওয়া অসম্ভব কিছু বলে মনে হয় না। আর সোলায়মান সুখন ভাই বা আয়মান সাদিক ভাইয়ের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা তিন অঙ্কের হলেও আমি অবাক হব না।

হ্যাঁ, ক্যালকুলেশন আর বাস্তবতার মাঝে বিস্তর ফারাক রয়েছে। তবুও জাকির ভাই যদি প্রতিদিন ১০ জনের মেসেজও পেয়ে থাকেন তারপরও তার প্রচুর সময় ব্যয় হবার কথা। তিনি টেকনিক্যাল পার্সন, তাকে টেকনিক্যাল প্রশ্নের উত্তর দিতে যদি ১৫ মিনিট সময়ও ব্যয় করতে হয়, তাতেও দৈনিক ১০*১৫ = ১৫০ মিনিট বা আড়াই ঘন্টা সময় ব্যয় হচ্ছে তার। টেকনিক্যাল প্রশ্নের কথাটা বললাম কারণ আমি এই ব্যাপারটার সাথে বেশি পরিচিত। আর এটা নিয়ে কথা বলাই আমার উদ্দেশ্য।

যাহোক, প্রশ্ন হল - তাই বলে কি কাউকে মেসেজ দেব না? যারা টেকনিক্যাল প্রশ্ন করেন তাদেরকে আমি মেসেজের বদৌলতে চমৎকার তিনটা উপায় বাতলে দিতে পারি। এক নাম্বার হল, গুগলে সার্চ করুন। ধরুন, আপনি একজন ভাল প্রোগ্রামিং প্রব্লেম সলভার হতে চান। এখন, অন্যকে বিরক্ত না করেও কিন্তু আপনি এই বিষয়ে প্রচুর জ্ঞান লাভ করতে পারেন। সিম্পলি ‘how to be a problem solver in programming’ লিখে গুগলে সার্চ করুন। দেখবেন প্রচুর আর্টিকেল পাবেন। দশ-বারটা আর্টিকেল পড়ে নিজের মত করে ফলো করুন।

আবার ধরুন, আপনি ওয়েব প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করতে চান। কিন্তু কোন ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে শুরু করবেন সে বিষয়ে আপনি কনফিউজড। সেক্ষেত্রে ‘best programming language for web programming’ লিখে গুগলে সার্চ করতে পারেন। দেখবেন বিভিন্ন খ্যাতনামা লোকের পরামর্শ পেয়ে যাবেন। সবারটাই মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। তারপর আপনার যেটা ভাল লাগে সেটা ফলো করুন। সিম্পল!

আবার ধরুন আপনার জানতে মন চাইল, কিকস্টার্টার প্রফিট শেয়ার করে কিনা। আপনি কিন্তু ওদের ওয়েবসাইটে গিয়ে একটু পড়াশুনা করতে পারেন। আরো সহজে খেতে চাইলে, গুগলে লিখে সার্চ করুন ‘kickstarter share profit’। দেখবেন কিছু না কিছু উত্তর পেয়েই যাবেন। আবার ধরুন, আপনার ওয়ার্ডপ্রেস শিখতে ইচ্ছে করছে। ‘wordpress tutorial’ লিখে সার্চ করলেই কিন্তু প্রচুর টিউটোরিয়াল খুঁজে পাবেন।

এবার ধরা যাক, আপনি যে সমস্যার সমাধান খুঁজছেন তা গুগলে সার্চ করেও পাওয়া যাচ্ছে না। হ্যাঁ, এমনটা হতেই পারে। অনেক সমস্যাই আছে যারা সমাধান গুগলে ইনডেক্স করা নেই (গুগলের নিজস্ব কন্টেন্ট নেই বললেই চলে)। সেক্ষেত্রে কি করা যায়? না, এই ক্ষেত্রেও কাউকে মেসেজ দেয়ার দরকার নাই। আপনি বিভিন্ন কমিউনিটির (ফোরাম/ফেসবুক গ্রুপ) সাহায্য নিতে পারেন। অনেক কমিউনিটিই রয়েছে যারা নিজের খেয়ে পরের উপকার করে। সেখানে গিয়ে আদবের সাথে নিজের সমস্যা তুলে ধরুন। খেয়াল রাখুন, ভাষা যেন মার্জিত হয় এবং বাংলা/ইংরেজি ভাষায় (নো টাকলামি) হয়। আপনার ভাষাই উত্তরদাতা/সমাধানদাতার কাছে আপনার ফার্স্ট ইমপ্রেশন তৈরি করবে। সেখানে ফেইল হয়ে গেলে কিন্তু কাহিনি ঘেরকে - ‘You will never get a second chance to make a first impression.’

আমি কিছু টেকনিক্যাল গ্রুপের খবর দিচ্ছি আপনাকে। প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত সমস্যায় এসো প্রোগ্রামিং শিখিপ্রোগ্রামিং প্রব্লেম গ্রুপে ঢুঁ মারতে পারেন। স্পেসিফিক্যালি পাইথনের জন্য পাইথন বাংলাদেশ গ্রুপ রয়েছে। লিনাক্স ডিস্ট্রো সংক্রান্ত সাহায্যের জন্য লিনাক্স বাংলাদেশ গ্রুপে প্রশ্ন করতে পারেন। আর শুধুমাত্র উবুন্টুর জন্য ঢুঁ মারতে পারেন উবুন্টু বাংলাদেশে

তারপরও যদি মনে করেন ব্যক্তিগতভাবে কারো সাথে কথা বলতেই হবে সেক্ষেত্রে ইমেইল করাটা সর্বোত্তম উপায়। তবে আমার বলা প্রথম ও দ্বিতীয় উপায় থেকে প্রাপ্ত ফলাফল মেইল-রিসিভারকে জানাতে ভুল করবেন না। এটা আপনার ইমেইলের উত্তর দিতে রিসিভারকে উৎসাহিত করবে। ইমেইল করার কিছু কায়দা-কানুন আছে। সেটা নিয়ে কয়েকমাস আগে একটা পোস্ট লিখেছিলাম, দেখে নিতে পারেন

যদি ইমেইল এড্রেস না জানা থাকে, তখন মেসেঞ্জারে মেসেজ দেয়া যেতে পারে। কিন্তু আমরা অনেকেই মেসেঞ্জারে ঢুকলে আদব-কায়দা ভুলে যাই। এটা করা উচিত না। মুসলিম হলে কথার শুরুতে সালাম দেয়া যেতে পারে। অন্যথায় হাই/হ্যালো বলেই কাজ চালাতে হবে। আবার কুশলাদি বিনিময় করতে করতে বিরক্তি উৎপাদন করা উচিত না। একটা মেসেজেই হাই/হ্যালো, কুশলাদি বিনিময় ও সমস্যার কথা জানাতে হবে। এতে আপনার ও প্রাপকের মূল্যবান সময় বাঁচবে। কখনো কখনো কথা-বার্তা হয়নি এমন কাউকে প্রশ্ন করে বিব্রত করা উচিত না।

আসুন, নিজের ও অপরের সময়ের মূল্য দিতে শিখি। মেসেঞ্জারের উত্তম ব্যবহার করি। অন্যের লেখা নিজের নামে চালিয়ে নিজেকে জেনেটিক্যাল চোর প্রমাণ করা থেকে বিরত থাকি।