তরুণ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র (শর্টফিল্ম) নির্মাতা সুব্রত সাহার নতুন শর্টফিল্ম ‘বুমেরাং’। এই শর্টফিল্মের সকল অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলা-কুশলী’ই ডেবুট্যান্ট। আর এর চেয়েও মজার ব্যাপার হল এরা সবাই আমার ফ্যাকাল্টির ছোট ভাই-বোন। সুব্রত আমাকে অনুরোধ করেছিল আমি যেন ওর শর্টফিল্মের উপরে একটা রিভিউ লিখি। কিন্তু সমস্যা হল আমি কোন সিনেমা ক্রিটিক নই বা শর্টফিল্মের বিভিন্ন দিক অতটা ভাল বুঝিও না। কিন্তু অনেকটা সুব্রত’র অনুরোধ রক্ষা করতেই এই রিভিউ লেখা শুরু করেছি।

‘পরের জন্য কুয়া খুঁড়লে, সেই কুয়ায় নিজেকেই পড়তে হয়’ - ২১ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের এই শর্টফিল্মের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় এটাই। এরকম টপিকের উপর শর্টফিল্ম খুব কমই আছে। সেদিক থেকে সুব্রত’র গল্পটা মৌলিকতার দাবিদার (অন্ততপক্ষে আমি এরকম শর্টফিল্ম আর দেখিনি, তবে থাকতে পারে)। মূল গল্পকে বেশ কয়েকটা চরিত্রের সংলাপ চালাচালির মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

পুরো শর্টফিল্মটা দেখার পর মূল গল্পটা স্পষ্ট করে বোঝা গিয়েছে। গল্পের অন্যতম প্রধান দুইটা চরিত্র ফারহান ও আশিকের অভিনয় আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে। ফারহান সাবলীলভাবে অভিনয় করে গিয়েছে। তবে আরো চমৎকার অভিনয় করার সুযোগ রয়েছে তার। সবচেয়ে ভাল অভিনয় করেছে আশিক। ফারহান ও আশিকের র‍্যাগিং দৃশ্যগুলো খুবই বাস্তব মনে হয়েছে আমার কাছে। এই দৃশ্যগুলোই এই শর্টফিল্মের সেরা অংশ যা প্রশংসার দাবিদার। হল প্রভোষ্ট নামে অতিথি চরিত্রটা, যেটা শুভ প্লে করেছে, সেটা অসাধারণ হয়েছে। শুভ আসলে অভিনয় করেনি, ওর বাস্তবিক গেটাপ’ই এরকম। ওর প্রাকৃতিক বিষয় ধরে রাখতে পেরেছে বলে ধন্যবাদ শুভকে। ইমরানের মোবাইল ভাঙার দৃশ্যটাও চমৎকার লেগেছে।

এবার স্পয়লারের পালা! যারা যারা এখনও শর্টফিল্মটা দেখেননি তাদের জন্য অনুরোধ আমার দেয়া স্পয়লার পড়ার আগে শর্টফিল্মটা দেখে নিন। দেখে ফেলেছেন? ওকে, এবার স্পয়লার শুরু করলাম।

গল্পের শুরুতে আশিক আর সুব্রতকে ক্যামেরার ফ্রেমে দেখা যায়। ক্যামেরাম্যান বাঁধন মজুমদার ক্যামেরার কাজ মোটামুটি ভালই করেছে। কিন্তু সম্ভবত কারিগরি সমস্যার কারণে তাকে ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। আমি তার থেকে ভবিষ্যতে আরো ভাল কাজ আশা করব। যাহোক, দৃশ্যপটে অর্পিতার প্রবেশ ফিল্মি করার চেষ্টা করা হলেও অর্পিতার ওভার-অ্যাক্টিংয়ের কারণে পরিচালকের চেষ্টা মাঠে মারা গেছে। আর পরিচালকের উচিত ছিল অর্পিতাকে সোজা রাস্তায় হাঁটিয়ে দৃষ্টিনন্দন ভাবে দৃশ্যপট থেকে বের করে নেয়া। কিন্তু অর্পিতা যেন এক রকম পালিয়েই গেল দৃশ্যপট থেকে, ব্যাপারটা চোখে লেগেছে। তারপর আশিককে উদ্দেশ্য করে সুব্রত’র সংলাপ বেমানান লেগেছে কানে। আশা করি ডাবিংয়ে পরিচালক আরো যত্নশীল হবে (আমি জানি এটা কারিগরি ত্রুটি)।

ফারহান-অর্পিতা জুটি পরিচালকের ভুল। স্ক্রীনে অর্পিতার চেয়ে ফারহানকে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতায় অনেক ছোট মনে হয়েছে। এই জায়গায় ফারহানের সাথে অন্য কাউকে নেয়া যেত। অর্পিতার বাজে অভিনয় এই শর্টফিল্মের একটা বাজে দিক। ওভার-অ্যাক্টিং বাদ দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে সংলাপ থ্রো করলেই মনে হয় ভাল করত অর্পিতা। পরিচালকের এই ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া দরকার (হয়েও লাভ নেই, কারণ পরিচালকের কাছে অল্টারনেটিভ অভিনেত্রী নেই। তারচেয়ে অর্পিতাকেই ঘষেমেজে ঠিক করে নেয়া উত্তম)।

ইমরানের অভিনয় মোটামুটি ধরনের হয়েছে। তবে তার জুটি তানজি ওভার-অ্যাক্টিং করেছে। দুজনের দ্বৈত অভিনয় মাঠে মারা গেছে। আর ওদের প্রথম দ্বৈত দৃশ্য শুট করতে গিয়ে বাঁধনও অনভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে। ইমরানের মোবাইল ভাঙার দৃশ্য ভাল লাগলেও বসে পড়ার দৃশ্যটা সাজানো মনে হয়েছে। আশা করি পরের বার ভাল হবে।

মুহতাসিমকে নিয়ে আমার অনেক বড় আশা ছিল। কারণ ওর চেহারার ভিতরেই একটা অভিনেতা-অভিনেতা ভাব রয়েছে। কিন্তু শর্টফিল্মে ওর আড়ষ্টভঙ্গির অভিনয় হতাশ করেছে আমাকে। আমি ওর থেকে আরো ভাল কিছু আশা করি, করেছি আর করব।

শেষের একটা দৃশ্যে ফারহান একটু খাপছাড়া হয়ে গিয়েছে। আশা করি পরিচালক এগুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখবে। মদ্দা কথা, অর্পিতা-তানজি বাদে বাকি সবাই হয় মোটামুটি, নয় তো ভাল অভিনয় করেছে। কিন্তু মেয়ে দুটোর অভিনয় এই শর্টফিল্মের ভরাডুবির কারণ হতে পারে।

আরেকটা কথা, শর্টফিল্মের দৈর্ঘ্য ১২-১৫ মিনিটের বেশি হওয়া উচিত নয়। এতে দর্শক বিরক্তবোধ করে। সেক্ষেত্রে শর্টফিল্ম না বলে নাটক নামে অভিহিত করা যেতে পারে। আর আমার মনে হয়, শর্টফিল্ম যত ছোট ততই ভাল হয়। মানুষের দেখতে সুবিধা হয়। তবে স্ট্রং কাহিনির ক্ষেত্রে টাইমলেংথ লম্বা করার প্রচলনও রয়েছে।

পরিশেষে, সুব্রতকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই এইজন্য যে ওর জিনিসটা দিনশেষে ভাল লেগেছে। প্রাথমিকভাবে কিছু ভুলভ্রান্তি হয়তো হয়েছে কিন্তু সেগুলো পারিপার্শ্বিকতা ও কারিগরি যন্ত্রপাতির অসহজলভ্যতার কারণে। আস্তে আস্তে সবার সহযোগীতায় এগুলো কাটিয়ে ওঠা যাবে, দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আর ফারহান ও আশিক আরো অনেক বড় মাপের কাজ করবে বলে আমার বিশ্বাস। আর এই যে পাঠক, ভাল লাগলে সুব্রত’র শর্টফিল্মটাকে শেয়ার করতে ভুল করবেন না যেন। কারণ, ভাল ও সৃজনশীল কাজের প্রণোদনা না দিলে তরুণ সৃজনশীল কর্মীরা হারিয়ে যাবে অকালে।