গত মে মাসের ৩ তারিখে পিকাবু থেকে ZedBook W টু-ইন-ওয়ান কনভার্টিবল ল্যাপটপ অর্ডার করেছিলাম। প্রায় ৬ দিন পর, ১০ তারিখে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ক্যাশ-অন-ডেলিভারি পেয়েছিলাম। প্রায় একমাস হল জিনিসটা ব্যবহার করছি। জিনিসটার বিশেষত্ব হল – এটাকে ল্যাপটপ হিসেবে ব্যবহার করার পাশাপাশি ট্যাবলেট পিসি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। ইন্টারেস্টেড অনেকেই রিভিউ চেয়েছিলেন, সেই চাওয়া থেকেই এই রিভিউয়ের সূত্রপাত।

(১) প্রসেসর: এতে ব্যবহৃত হয়েছে ইন্টেলের ১.৩৩ গিগাহার্জ ক্লকরেটের কোয়াডকোর প্রসেসর Z3735F। ২ মেগাবাইট L3 ক্যাশে রয়েছে, হাইপারথ্রেডিং ও ওভারক্লকিং নেই। টার্বো (Turbo) মোডে ক্লকরেট ১.৮৩ গিগাহার্জ পর্যন্ত বুস্ট হয়। কোয়াডকোর প্রসেসর আর গিগাহার্জ দেখেই লাফ দিলে চলবে না। প্রসেসরের বেঞ্চমার্ক স্কোর অত্যন্ত কম, মাত্র ৯০৯। প্রশ্ন উঠতে পারে, আমি কেন এরকম লক্কড় মার্কা প্রসেসরের ল্যাপটপ কিনলাম। আরে ভাই, এটা নিয়ে আমি চন্দ্রাভিযানে যাব না, আমি শুধু Putty ব্যবহার করি।

(২) জিপিইউ: ইন্টেল এইচডি গ্রাফিক্স, ফ্রিকুয়েন্সি ০.৩১ গিগাহার্জ যা টার্বো মোডে ০.৬৫ গিগাহার্জে বুস্ট হয়।

(৩) র‍্যাম: ২ গিগাবাইট DDR3L-1333 SO-DIMM র‍্যাম। আলোচ্য প্রসেসরের জন্য এর চেয়ে বেশি র‍্যাম আদিখ্যেতা ছাড়া অন্যকিছু হত না।

(৪) স্টোরেজ: ৩২ গিগাবাইট eMMC ইন্টারনাল স্টোরেজ রয়েছে। একেবারে খারাপ না। হিসাব-নিকাশ করে অ্যাপ ইন্সটল করলে বেশ ভালই কাটবে দিন। এছাড়া ১২৮ জিবি পর্যন্ত মাইক্রো এসডি কার্ড সাপোর্ট করে, সে সুবিধা তো রয়েছেই।

(৫) ডিসপ্লে: ১০.১ ইঞ্চির ১২৮০x৮০০ রেজুলেশনের ক্যাপাসিটিভ মাল্টি-টাচ আইপিএস ডিসপ্লে। মুভি দেখতে ভালই লাগে এতে, জীবন্তই মনে হয়। আর টাচও সন্তোষজনক।

(৬) অপারেটিং সিস্টেম: বিল্ট-ইন উইন্ডোজ ১০ জেনুইন হোম এডিশন। ২ গিগাবাইট র‍্যামে চমৎকার কাজ করে। আপনি এটাকে ফেলে দিয়ে লিনাক্স ডিস্ট্রো দিতে চাইতে পারেন। আমি আপনাকে চরমভাবে নিরুৎসাহিত করব।

(৭) ব্যাটারি: ৬০০০ mAh ক্যাপাসিটির ব্যাটারি। আমি স্বাভাবিকভাবে আমার কাজের জন্য ব্যবহার করলে মোটামুটি ৪ ঘন্টার বেশি চার্জ থাকে। অবশ্য ব্যাটারি সেইভার মোডে ব্যবহার করলে ৬ ঘন্টা পার হয়ে যায়। আর মুভি দেখার কথা বললে বলব, আয়নাবাজি ও অজ্ঞাতনামা দেখার পরেও দেখবেন চার্জ অবশিষ্ট আছে।

(৮) ক্যামেরা: সামনে-পিছনে দুদিকেই ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা রয়েছে। ক্যামেরা এমনিতে খুবই ভাল। খালি ছবি তোলার পর মনে হয় দেশটা কুয়াশায় আচ্ছন্ন হইয়া গেছে আর স্কাইপিতে ভিডিও চ্যাট করার সময় অপরপাশের ব্যক্তির মনে হবে দুনিয়াটা কেমন আবছা আবছা।

(৯) ইউএসবি: একটা মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট (মূল অংশের সাথে) আর একটা ইউএসবি ২.০ পোর্ট (এক্সটার্নাল পার্টের সাথে)। মাইক্রো ইউএসবি ব্যবহার করার জন্য ফ্রী OTG ক্যাবল আছে সাথে। সমস্যা হল ইউএসবি ২.০ নিয়ে। এক্সটার্নাল পার্টের সাথে হওয়ায় এতে মডেম ভালভাবে কাজ করে না, বারবার ডিসকানেক্ট হয়ে যায়। তবে ব্লু-টুথ মাউস ভালই কাজ করে।

(১০) অডিও: স্টেরিও স্পীকারের পাশাপাশি ৩.৫ মিলিমিটার মিনি জ্যাক রয়েছে। তবে স্পীকার নিয়ে আমি অখুশি। দুনিয়াটা কেমন জানি মনে হয়। মনে হয়, সাউন্ড কোন গর্ত থেকে বের হচ্ছে। আর মাইক্রোফোনও রয়েছে। তবে প্রথম ৪-৫ দিন এই জিনিস কাজ করে নাই। ভেবেছিলাম, কি প্রোডাক্ট দিল আমারে! পরে অবশ্য আপনা-আপনি ঠিক হয়ে গিয়েছে।

(১২) কীবোর্ড: এতক্ষণ যেটাকে এক্সটার্নাল পার্ট বলছিলাম। আসলে এটাকে মূল অংশ থেকে এক টানে আলাদা করা যায়, তাই এক্সটার্নাল পার্ট বলেছি। এরকম খারাপ কীবোর্ড আমি জীবনে দেখিনি। কিছু বাটনে আলতো চাপে কাজ হয় না। অনেকগুলোতে চাপ দিয়ে আদিকালের টাইপরাইটারে টাইপ করার অনুভূতি আসে। চীনের দুঃখ হোয়াংহো, জেডবুক ইউজারদের দুঃখ এই কীবোর্ড।

এর সাথে টাচপ্যাডও রয়েছে। এটাও আরেকখান জিনিস। কিসে চাপলে কি হয় আর কি টাচ করলে কি না হয় তা আজও বুঝতে পারিনি।

(১১) অন্যান্য: এছাড়াও ব্লু-টুথ ফোর, ওয়াইফাই, মাইক্রো HDMI রয়েছে। পাশাপাশি, ১৬৯৯০ টাকায় কেনা এই জিনিসের সাথে পিকাবু একটা ব্লু-টুথ মাউস ও রিভ এন্টিভাইরাসের ১ বছরের লাইসেন্স ফ্রী দিয়েছে। মাউসের কথা আর কি বলব! দুনিয়ায় এর চেয়ে জঘন্য জিনিস হয় না, একমাসের ভিতরেই নষ্ট। আর রিভটা ইন্সটল করে আবার আনইন্সটল মেরে দিয়েছি। ২ গিগাবাইট র‍্যামে আর যাই হোক, রিভ এন্টিভাইরাস ইন্সটল দেয়া যায় না।

এই হল তড়িঘড়ি করে লেখা মোটামুটি মানের একটা রিভিউ। আর কিছু জানতে চাইলে কমেন্ট বাক্সে নিশ্চিন্তে জিজ্ঞেস করতে পারেন, তবে অবশ্যই বাংলা বা ইংরেজিতে।